অর্থনৈতিক সমস্যা কি (Economic problem)

অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে মূলত সম্পদের স্বল্পতা ও নির্বাচনের সমস্যাকে বুঝায়। মানুষের অভাব, কিন্তু মানুষের অভাব পূরণের উপকরণ বা সম্পাদক প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। মানুষের অভাব যেমন অসীম তেমনি সম্পাদক যদি অসীম হত তাহলে কোন অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হতো না।

আবার, সম্পদের স্বল্পতার কারণে মানুষকে বিভিন্নভাবে এরমধ্যে বাসায় বা নির্বাচন করতে হয়। মানুষের অসংখ্য অভাবের মধ্যে যেগুলো অধিকতর প্রয়োজনীয় সেগুলো আগে পূরণের জন্য বাছাই বা নির্বাচন করতে হয়।
সুতরাং স্বল্পতা ও নির্বাচনের সময় হলো মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা।

অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে কি বুঝায়

অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে মূলত স্বল্পতা এবং বাছাই বা নির্বাচনের সমস্যা কী বোঝায়। একটি অভাব পূরণ হলেই নতুন নতুন অভাব দেখা যায়। মানুষের অভাব যেমন অসীম তেমনি সম্পদ যদি অসীম হতো তাহলে অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হত না।

কিন্তু মানুষের অভাব অসীম হলেও অভাব পূরণের উপকরণ বা সম্পদ সসীম। এই সম্পদ দ্বারা মানুষের সকল অভাব একসঙ্গে পূরণ করা যায় না। বস্তুত সম্পদের স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতা হল মানুষের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা।

অধ্যাপক রবিনসনের মতে, “সম্পদ সসীম হলেও তা বিকল্প ব্যবহারযোগ্য” অর্থাৎ একই সম্পদ বিভিন্ন অভাব পূরণে ব্যবহার করা যায়। যেমন একখণ্ড জমিতে ধান অথবা পাট উৎপাদন করা যায়। সম্পদের এরূপ বিকল্প ব্যবহার যোগ্য তার কারণেই মানুষ বিভিন্ন অভাবের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়।

বিকল্প ব্যবহারযোগ্য অপ্রচুর উপকরণ গুলো এমনভাবে নিয়োগ করতে হবে যাতে অধিকতর প্রয়োজনীয় অভাব গুলোকে পূরণ করা সম্ভব হয়। মানুষের সকল অভাব এর গুরুত্ব একরকম নয়। কোনটির গুরুত্ব বেশি, কোনটির গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত কম।

আবার, উপকরণগুলোর বিকল্প ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে এরূপ ফল দেয় না। একই উপকরণের একপ্রকার ব্যবহার অপেক্ষা আর এক প্রকার ব্যবহারের অধিকতর ফল পাওয়া যেতে পারে।

কিন্তু কোন উপকরণ একই সাথে একাধিক ব্যবহার নিয়োগ করা যায় না। কোন উপকারও দ্বারা একটি উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে উন্নয়নের সাথে অন্য একটি উদ্দেশ্য ত্যাগ করতে হয়। এজন্যই সীমিত সম্পদ দ্বারা অসীম অভাব পূরণের ক্ষেত্রে বাছাই বা নির্বাচন করতে হয়।

অর্থনীতিবিদ বেনহাম বলেন, “মানুষ বাছাই করতে বাধ্য হয় বলেই অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়”।

সুতরাং অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে সম্পদের স্বল্পতা এবং অসংখ্য উভয়ের মধ্যে বাসায় বা নির্বাচনের সমস্যা কেই বোঝায়। সংক্ষেপে বলা যায়, অসীম অভাব এবং সীমিত সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধন হলো মানুষের মূল অর্থনৈতিক সমস্যা।

অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন কর্মপদ যায় (উৎপাদন- বিনিময় -বন্টন-ভোগ)

মানুষ যেমন দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে তেমনি এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন কর্মকর্তা লিপ্ত থাকে। মানুষের এসব কর্ম প্রচেষ্টাকে কয়টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়, যেমন: উৎপাদন, বিনিময়, বন্টন ও ভোগ। এসব বিভিন্ন কর্মপথে প্রকৃতি সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো।

উৎপাদন: মানুষের বিভিন্ন কর্মপর্যায়ের এর মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য হলো উৎপাদন। মানুষের সব কর্মপ্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো অভাব পূরণ করা। এ অভাব পূরণের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন হলে উৎপাদন। কারণ, উৎপাদন কোন প্রশ্ন ওঠে না। মানুষের অভাব অসীম।

কিন্তু অভাব পূরণের উপকরণ সমূহ অত্যন্ত সীমিত। কাজেই কোন দ্রব্য কী পরিমাণে উৎপাদন করা হবে এবং কিভাবে উৎপাদন করা হবে সে সম্বন্ধে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অভাব পূরণ করাই হলো মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য। উৎপাদনের প্রধান লক্ষ্য হলো নতুন উপযোগ সৃষ্টি করা।

বিনিময়: উৎপাদনের পরবর্তী পর্যায়ে হলো বিনিময়। আদিম যুগে মানুষের অভাব ছিল সামান্য। প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করে অভাব পূরণের চেষ্টা করত। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের প্রয়োজন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান যুগে কেউ তার প্রয়োজনীয় সব কিছুই উৎপাদন করতে পারে না।

প্রত্যেক ব্যক্তি তার দক্ষতা অনুযায়ী কিছু কিছু দ্রব্য উৎপাদন করে এবং তার বিনিময়ে সামান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করে। এভাবে সমাজের প্রয়োজন দেখা দেয়। বিনিময় প্রথার প্রথম দিকে মানুষ এক পণ্যের সাথে অন্য পণ্য বিনিময় করত।

কিন্তু সমাজে মুদ্রা প্রচলন হওয়ার পর বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রা ব্যবহার হচ্ছে। বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষ তাদের বিভিন্ন প্রকার অভাবের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে। এজন্য মানুষের বিভিন্ন কর্মকর্তা এর মধ্যবিন্দু মায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

বন্টন: উৎপাদনের পরবর্তী পর্যায়ে হল বন্টন। উৎপাদিত সম্পর্কে বা কারা ভোগ করবে এবং কিভাবে তা বন্টন করা হবে তাই স্থির করতে হয়। অনেক সমস্যার সমাধান কেবল উৎপাদনের উপর নির্ভর করে না। বরং উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর কাম্য বন্টনের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে।

ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে সামগ্রী উৎপাদিত হয়। কাজেই উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদনের উপকরণ গুলোর মধ্য বঞ্চিত হয়ে থাকে। জমির মালিক খাজনা শ্রমিক মুজুরি মূলধনের সুদ এবং সংগঠন থাকে। উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী ভোগ কারী গনের অভাব কতটা পরিমাণ পূরণ করতে সক্ষম হলাম সে নির্ভর করে বন্টন ব্যবস্থার উপর। সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম বন্টনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ভোগ: অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়ের মধ্যে সর্বশেষ পর্যায় হলো ভোগ। মানুষের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যাবলি উদ্দেশ্য হল অভাব পূরণ। বস্তুত মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ ভোগের নিমিত্তে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন উপকরণের সাহায্য দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী ভোগের মাধ্যমে অভাব পূরণের চেষ্টা করা হয়।

এভাবে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষের বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা কে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। মানুষের বিভিন্নমুখী কর্মপ্রচেষ্টার ভিত্তি হলো উৎপাদন। কোন পণ্য উৎপাদন করতে হবে এবং তারপরই তা বিনিময় বন্টন ভোগ করা হয়। উৎপাদন ও ভোগ এর মধ্যবর্তী প্রক্রিয়া হল বিনিময় ও বন্টন। ভোগ হলো সমগ্র প্রক্রিয়াটির সম্পূর্ণতা প্রদানকারী পর্যায়।

সুতরাং উৎপাদন বিপণন ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া নয়, বরং এগুলো হলো একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন কর্মপর্যায়।